স্ক্যাবিস: দ্রুত ছড়িয়ে পড়া একটি চর্মরোগ – কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

বর্তমানে শহর ও গ্রামে স্ক্যাবিস নামক একটি চর্মরোগ মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে আবাসিক মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। একজন আক্রান্ত শিক্ষার্থীর মাধ্যমে খুব সহজেই এটি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

অনেক সময় শিক্ষার্থীরা একসাথে চিকিৎসা না নেওয়ায় স্ক্যাবিস পুরোপুরি নিরাময় হয় না, বরং পুনরায় সংক্রমণ ঘটে। সচেতনতার অভাব, ভুল ধারণা এবং চিকিৎসা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে এই রোগটি দিন দিন আরও জটিল আকার ধারণ করছে।

স্ক্যাবিস সম্পর্কে ভুল ধারণা

অনেকেই মনে করেন স্ক্যাবিস হলো করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। বাস্তবে স্ক্যাবিস হয় Sarcoptes scabiei নামক একটি ক্ষুদ্র পরজীবীর (মাইট) কারণে, যা মানুষের চামড়ার নিচে গর্ত করে বসবাস করে এবং তীব্র চুলকানির সৃষ্টি করে।

স্ক্যাবিসের প্রধান লক্ষণ

  • তীব্র চুলকানি, যা রাতে বেশি হয়
  • লালচে গুটি বা র‍্যাশ
  • চামড়ায় সূক্ষ্ম রেখার মতো সুড়ঙ্গ দাগ

সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত স্থানগুলো হলো:
আঙুলের ফাঁক, কবজি, কোমর, নাভির চারপাশ, স্তনের নিচে, যৌনাঙ্গ ও নিতম্ব

স্ক্যাবিসের চিকিৎসা

  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ
  • পরিবারের সকল সদস্যকে একসাথে চিকিৎসা নেওয়া
  • ব্যবহৃত পোশাক, তোয়ালে ও বিছানার চাদর গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানো
  • চুলকানি কমানোর জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট বা ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার

স্ক্যাবিসের জটিলতা

  • ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন
  • ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস (Norwegian Scabies), যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে দেখা দেয়
  • বারবার সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা
  • দীর্ঘমেয়াদি রোগে কিডনি সমস্যা হতে পারে
  • ত্বকে ফোঁড়া বা একজিমার মতো চর্মরোগে পরিণত হতে পারে

স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয়

  • প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
  • সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা
  • ব্যক্তিগত পোশাক, তোয়ালে ও ব্যবহার্য সামগ্রী আলাদা রাখা
  • রোগের লক্ষণ দেখা মাত্র চিকিৎসা গ্রহণ করা

সঠিক চিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের গুরুত্ব

স্ক্যাবিস যদি দীর্ঘদিন ধরে থেকে যায়, তাহলে তা মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেক সময় ভুল বা অপচিকিৎসা স্ক্যাবিসকে একজিমার মতো জটিল রোগে রূপান্তর করে।

তাই সময়মতো চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজন হয় মানসিক কাউন্সেলিং এবং রোগ সম্পর্কে সচেতনতা। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা করালে স্ক্যাবিস দ্রুত নিরাময় সম্ভব।

Scroll to Top